১৯৬৬ বিশ্বকাপে এক ইংলিশ রেফারি ইতালিয়ান এক খেলোয়াড়কে মাঠ থেকে বের করার সিদ্ধান্ত নেন। ইংরেজিতে বলা রেফারির সিদ্ধান্ত বুঝতে পারেননি সেই খেলোয়াড়। তিনি মাঠও ছাড়ছিলেন না। ভীষণ গোল বাধে। পরে সেই রেফারি ভাবছিলেন, কোনো খেলোয়াড়কে ফাউলের জন্য সতর্ক করা বা মাঠ থেকে বের করে দেওয়ার জন্য কী সংকেত ব্যবহার করা যায়। এর থেকেই
লাল কার্ড, হলুদ কার্ড ছাড়া ফুটবলের কথা চিন্তাই করা যায় না। কখনো কখনো তো এই কার্ড খেলার রূপই পালটে ফেলে। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটির কথাই ধরুন না। ফ্রান্সের অনেকেরই বিশ্বাস, জিনেদিন জিদান লাল কার্ড পেয়ে মাঠের বাইরে চলে না গেলে হয়তো ফাইনালের ফলটাই অন্য রকম হতো।
বিশ্বকাপের মতো ম্যাচে লাল কার্ড এমনিতেই আলোচিত ঘটনা। যদিও বিশ্বকাপে লাল কার্ড, হলুদ কার্ডের ইতিহাস কিন্তু অতটাও পুরোনো নয়। ১৯৬২ বিশ্বকাপের কথা, স্বাগতিক ছিল চিলি। ফুটবলীয় শক্তিতে পিছিয়ে থাকা দেশ চিলিতে বিশ্বকাপ হচ্ছে, ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেনি ইতালিয়ানরা। তারই প্রভাব পড়েছিল গ্রুপ পর্বে চিলি-ইতালির ম্যাচটিতে। বেশ কিছু ফাউলের ঘটনা ঘটে। এখনো এই ম্যাচটি ব্যাটল অব সান্তিয়াগো নামে পরিচিত।
ম্যাচে সবচেয়ে বিপাকে ছিলেন ইংল্যান্ডের কেন এসটন। ম্যাচটি পরিচালনার দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। মাত্র ১২ সেকেন্ডের মাথায় ম্যাচে প্রথম ফাউল, তবে প্রথম ফাউলের মাত্রা ছাড়িয়ে যায় ১২ মিনিটের মাথায় গিওর্গি ফেরিনির করা দ্বিতীয় ফাউলটি। রেফারি ফেরিনিকে মাঠ থেকে বের করার সিদ্ধান্ত নেন। ইংরেজিতে বলায় এসটনের নির্দেশটি ফেরিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি। তিনি মাঠও ছাড়ছিলেন না। ভীষণ গোল বাধে। পরে পুলিশ এসে জোর করে মাঠ থেকে তাঁকে বের করে দেন।
ঘটনাটি এসটনকে বেশ ভাবিয়েছিল। বিশ্বকাপ নানান দেশের, ভাষার, সংস্কৃতিরও মিলনমেলা। রেফারির ভাষা মাঠের খেলোয়াড়েরা না-ও বুঝতে পারেন। চিলি ম্যাচটাতেই যা হয়েছে। নতুন নিয়ম বের করার তাগিদ অনুভব করেন তিনি। ম্যাচ শেষে বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎ ট্রাফিক লাইট দেখে তাঁর মাথায় হলুদ এবং লাল কার্ডের ভাবনাটি খেলে যায়। ‘যখন গাড়ি চালাচ্ছিলাম, লাল আলো দেখে আমার মাথায় এল, হলুদ মানে “শান্ত হও” এবং লাল মানে “থামো, বের হয়ে যাও”।’ পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তিনি।
মুখে বুঝিয়ে বলার আর ভাষা বিড়ম্বনার এই ঝামেলা থেকে সহজে মুক্তি দিতে চলে এল লাল ও হলুদ কার্ড। তাঁর ভাবনার কথা জানালে ফিফাও রাজি হয়ে যায়। তখন থেকে ফুটবলে চালু হয় কার্ডের ব্যাপারটি। যেটি প্রথম বিশ্বকাপে ব্যবহার করা হয়েছিল ১৯৭০ আসরে।
ভাগ্যিস সেদিন এসটনের চোখে ট্রাফিক লাইট চোখে পড়েছিল!