ফেসবুকের আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় –
১. প্রথমে কিছুদিনের জন্য কোনো কিছু আপলোড করা বা স্ট্যাটাস দেয়া অথবা কারো পোস্টে কমেন্ট করা থেকে দূরে থাকুন। মানে ফেসবুকে ঢুকবেন, সব দেখবেন কিন্তু কিছু করবেন না। আপনাকে ট্যাগ করার অপশন বন্ধ করে দিন অথবা টাইমলাইন রিভিউ চালু করে দিন। এতে করে আপনার নোটিফিকেশন আসা কমে যাবে।
২. সম্প্রতি ফেসবুক অতীতকে উস্কে দেয়ার পদ্ধতি চালু করেছে। আপনার ওয়ালে অতীতের কোনো একটা স্ট্যাটাসের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তাকে শেয়ার দেয়াতে প্রলুব্ধ করতে চায়। মানে আপনাকে আরও আসক্ত করতে চায়। আপনার সময় কেড়ে নিতে চায়। সেই ফাঁদে পা দেওয়ার দরকার নেই। ছবিটা দেখে মনে মনে ওই সময়ের স্মৃতিচারণা করুন। মনে মনে ভালো কিছু অনুভব করুন। তারপর আস্তে করে ওখান থেকে সরে পড়ুন।
৩. স্মার্টফোনে ফেসবুক এপ্লিকেশন থাকলে সেটা ডিলিট করে দিন। তার পরিবর্তে অপেরা মিনি বা ইউ সি ব্রাউসার দিয়ে ফেসবুকে ঢুকুন। এতে করে আপনার অটো নোটিফিকেশন আসা বন্ধ হবে এবং ফেসবুকের অনেক আকর্ষনীয় অপশন ব্যবহার করতে পারবেন না বলে আসক্তি অনেকটাই কমে আসবে।
৪. এগুলো হচ্ছে প্রথমদিকের ধাপ। ধীরে ধীরে আপনি আপনার ফেসবুকে ঢোকা দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ে আসতে পারেন। হয়তো সকালে একবার আর সন্ধ্যায় একবার। আস্তে আস্তে আরও কম। একটা সময় এমন হবে যে আপনি কারও সাথে যোগাযোগের প্রয়োজন ছাড়া ফেসবুকে আসবেন না। তারপরের ধাপে আপনি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবেও ফেসবুককে পরিত্যাগ করবেন। বিকল্প হিসাবে ম্যাসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি তো আছেই। সোজা কথায় আপনার আসক্তি কমলে সময় নষ্ট হওয়াও কমবে। এই সময় আপনি অন্য কাজে মন দিতে পারবেন অথবা পরিবারকে সময় দিতে পারবেন।
৫. প্রকৃতির একটা নিয়ম হল সে কখনও শুন্যস্থান পছন্দ করে না। অর্থাৎ কোন কিছুই কারোর জন্য থেমে থাকে না। তাই একটা অভ্যাস দূর করতে হবে আরেকটা অভ্যাস দিয়ে। তাই ফেসবুকে দেওয়া সময়টা কাজে লাগানো যেতে পারে অন্য কোনো ক্রিয়েটিভ কাজে। যেমন কোনো একটা বাদ্যযন্ত্র (হারমোনিয়াম/বাঁশি/গীটার) বাজাতে শেখা কিংবা কম্পিউটারের কোনো একটা দক্ষতা অর্জন করা (ফটোশপ/এম এস এক্সেল/পাওয়ার পয়েন্ট), দেশি বিদেশি গল্পের বই পড়া, ছবি আঁকার চেষ্টা করা, কিছু লেখার চেষ্টা করা, হাতের লেখা সুন্দর করতে চেষ্টা করা, নতুন কোনো খেলা (দাবা, , সুডোকু, তাস) শেখা, সাঁতার কিংবা সাইকেল বা বাইক চালানো শেখা ইত্যাদি। কত কিছুই তো করা বাকী আছে এই জীবনে! আর এই প্রত্যেকটা কাজ শিখতে চাইলে যথেষ্ট সময় দেয়ার প্রয়োজন আছে। কোনো একটা কাজে দক্ষ হতে চাইলে আপনাকে একটা বেশ ভালো সময় ওই কাজে দিতে হবে।
ফেসবুকে আপনি যে পরিমান সময় দিচ্ছেন তাতে করে আপনি এতোদিনে ফেসবুকিং-এ দক্ষ হয়ে গেছেন। যদি হয়ে থাকেন তাহলে সময় এসেছে একটু ভাবার। কারণ ফেসবুক করার এই দক্ষতা আপনার জীবনে আলাদা কোনো গুরুত্ব বহন করেনা। বরং আপনার জীবনে এমন কিছু একটা শেখার ইচ্ছা ছিল যেটা আপনি সময়ের অভাবে করে উঠতে পারেননি। সেই ইচ্ছাটি পুরণ করার চেষ্টা করুন। নিজের আয়নায় নিজেকে একবার দেখার চেষ্টা করুন। আর যদি নিজের অবস্থান বুঝে উঠতে পারেন তাহলে আজ থেকেই শুরু করুন ফেসবুক নামক রোগ থেকে মুক্তির চেষ্টা। না, এই রোগের ঔষধ অন্য কারও কাছে নেই, কেবল আপনার কাছেই আছে। সারিয়ে তুলুন আপনার রোগ। একেবারে বন্ধ নয়। চেষ্টা করুন, যাতে ফেসবুক আপনাকে গ্রাস না করে।
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।