২০১০ খ্রিষ্টাব্দ ছিল ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের মৃত্যু শতবার্ষিকী। গিরিশচন্দ্র সেন বাংলা ভাষার কোরআন শরীফের প্রথম তরজমা করে মশহুর হয়েছেন- এ তথ্য সবার জানা। বাঙালি মুসলমান সমাজে তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তার কারণও এটা। তিনি শুধু কোরআন শরীফের তরজমা করেননি, তিনি যে ৪২ টি পুস্তক রচনা করেছিলেন তার সিংহভাগই ছিল মুসলিম সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে লেখা। সাধারণ বাঙালি মুসলমানরা আরবি-ফার্সি-উর্দু জানে না। ফলে তাদের প্রিয় কেতাবগুলো পড়তে পারে না। ওইসব গ্রন্থে যেসব মূল্যবান বাণী আছে তাও তাদের অন্যের মুখে শুনে পরিতৃপ্ত হতে হয়। গিরিশচন্দ্র সেন পবিত্র কোরআন শরীফের তরজমা করে এবং মুসলিম সংস্কৃতি ও মনীষার ওপর বিভিন্ন গ্রন্থ লিখে আজ থেকে শতাধিক বছর আগে বাঙালি মুসলিম সমাজের জন্য প্রভূত উপকার করে গেছেন। যখন কোরআন শরীফের কোনো বাংলা তরজমা ছিল না, এমনকি ইসলাম সম্পর্কে বাংলা ভাষায় তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচিত হয়নি, তখন গিরিশচন্দ্র তাঁর নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের ফল দিয়ে বাঙালি মুসলিম সমাজকে কতভাবে ঋণী করে গেছেন, তা লিখে প্রকাশ করা যাবে না। গিরিশ চন্দ্র ছিলেন পুরোপুরি অসাম্প্রদায়িক ও সর্বধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষ। উনিশ শতকের বঙ্গীয় সমাজে যখন ধর্মীয় মোহগ্রস্ততা ও সাম্প্রদায়িকতার বাড়বাড়ন্ত, সেই কালে নিজে অসাম্প্রদায়িক হওয়ার কারণে সর্বোচ্চ মনোযোগ, ঐকান্তিকতা ও আগ্রহ দিয়ে তিনি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হয়েও মুললিম সমাজ ও সংস্কৃতিকে বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। ইসলাম ধর্মশাস্ত্রের ওপর পাণ্ডিত্যের জন্য তাঁকে সেইকালে ‘মৌলভী গিরিশচন্দ্র সেন’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছিল। সমকালে এবং পরবর্তী সময়ে গিরিশ চন্দ্র কৃত বাংলা কোরআন শরীফ বাঙালি মুসলমান সমাজে বিপুলভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল।