একজন মুমিনের জন্যে ঈমান গ্রহণ করার পর তার উপর অপরিহার্য হয়ে পড়ে নামাজ আদায় করা। যেমন আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ১০৩ নং আয়াতে বলেছেন- ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻛِﺘَﺎﺑًﺎ ﻣَﻮْﻗُﻮﺗًﺎ নিশ্চয়ই নামাজ বিশ্বাসীগণের উপর নিদির্ষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত । নামাজ শুধু আদায় করলেই আমাদের জন্যে হক আদায় হয়ে যায় না। নামাজকে মুমিনের বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে হবে। অন্যথায় নামাজের দাবি কখনই পূরণ হবে না। নামাজের দাবি হচ্ছে- নামাজভিত্তিক জীবন গঠন করা। বিষয়টি একটু পরিষ্কার করে বললেই আপনারা বুঝতে পারবেন। একজন মুমিন নামাজে প্রথমে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আল্রাহর সামনে দন্ডায়মান হয়। এতে যত প্রকারের বিনয় নিহিত আছে সবই এর অন্তভূক্ত। তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত বাঁধার পর শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নির্দিষ্ট কিছু কাজে মনোযোগি হবে। এর বাইরে কোন আমল করা নিষিদ্ধ। মানুষের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে বিশেষভাবে হাত, পা, চোখ, কান ও মন এগুলোর সাহায্য নেয়া হয়। নামাজের বাইরে বৈষয়িক কার্যক্রমওর্ এগুলো দিয়েই সম্পাদিত হয়। নামাজে চক্ষুদ্বয়কে নিদষ্টর্ কিছু স্থানের দিকে রাখতে হয়। চক্ষুকে নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষা দেয়া হচ্ছে নামাজের মাধ্যমে। নামাজ থেকে অবসর হলে মুমিন যখন যমিনে চলাফেরা করবে, তখনও তার চক্ষুদ্বয়কে নিয়ন্ত্রণ করার তা’লিম দেয়া হচ্ছে। মুমিনের চোখ অবৈধ কোন জিনিষ দেখতে পারবে না। নামাজে যেমন মনে করা হয় বান্দা আল্লাহকে দেখতেছেন অথবা আল্লাহ বান্দাকে দেখতেছেন। নামাজের বাইরেও মনে করতে হবে যে, আল্লাহর দৃষ্টির বাইরে কোন কিছুই নয়। এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা:) বলেছেন, (হাদিসটি হাদিসে জিবরাইল নামে পরিচিত) হযরত জিবরাইল (আ:) আল্লাহর রাসুলকে জিজ্ঞেস করলেন, ইহসান কাকে বলে? জবাবে নবী (সা:) বললেন, বান্দা এমনভাবে এবাদত করবে যেন সে আল্লাহকে দেখতেছে। যদি এরকম যোগ্যতা হাসিল না হয়, তবে অন্তত এটুকু মনে করতে হবে যে, আল্লাহ বান্দাকে দেখছেনে। তেমনিভাবে হস্তদ্বয়ও নিদিষ্টর্ কিছু স্থান ছাড়া অন্য কোন স্থানে বিচরণ করবে না। মুমিন বান্দা যখন নামাজের বাইরে থাকবে, তখনও অযথা হাত চালাবে না। হাত দ্বারা কোন নাজায়েজ কাজ করবে না। এমনকি নাজায়েজ কাজের দিকে ইশারাও করতে পারবে না। যেমনটি নামাজে করে নাই। ঠিক তেমনিভাবে পা ও মুখের হুকুমও। মুখ দিয়ে কোন অযথা কথা বলা যাবে না। নামাজের মতই মুখকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নামাজে কতিপয় বাক্য ছাড়া অন্য কথা বা বাক্য বলা যেমন নাজায়েজ, তেমনি নামাজের বাহিরেও অযথা কোন কাজ বা কথা বলা নাজায়েজ। আল্রাহর রাসুল (সা:) এক হাদিসে বলেছেন, প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে। নামাজের দাবি হচ্ছে- একজন মুমিন নিজের জীবনকে নামাজভিত্তিক করে তুলবে। তা না হলে নামাজের প্রকৃত হক আদায় হবে না। যদি প্রত্যেকেই তার অবস্থান থেকে স্বীয় জীবনকে নামাজের আদলে গড়ে তুলার প্রয়াস চালায়, তবে সেদিন হয়তো আর বেশি দূরে নয়, যেদিন সুন্দর একটি সমাজ কায়েম হবে। কোন মানুষ অপর মানুষের দ্বারা অত্যাচারিত বা জুলুমের শিকার হবে না। নামাজ যদিও ইসলামের দ্বিতীয় রুকন। কিন্তু নামাজের এত গুরুত্ব এবং ফজিলত রয়েছে, যা আমরা বিভিন্ন হাদিসে দেখতে পাই। রাসুল আকরাম (সা:) বলেছেন, মুমিন এবং কাফেরের মধ্যে তফাৎ হলো নামাজ। নামাজ নেহায়েত একটি এবাদত নয়, নামাজ মুমিনের জাগতিক জীবন সুন্দর করার অন্যতম একটি প্রশিক্ষণের নাম।