আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘(১) কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান করা হয়, তাহা ইহলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ’৷ ‘(২) কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি ১[ অনধিক চৌদ্দ বৎসর এবং অন্যূন সাত বৎসর কারাদণ্ডে] এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন’৷ ২০১৩ সালেই এ নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কেউ কেউ হাইকোর্টে এর বিরুদ্ধে মামলাও ঠুকে দেন। যে মামলাগুলো এখনো বিচারাধীন। এর মধ্যে ৫৭ ধারায় প্রায় সাড়ে সাত শতাধিক মামলাও করা হয়েছে। গণমাধ্যমের তথ্য মতে, সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক আরেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ ধারায় মামলা করেছেন। যদিও সমঝোতায় মামলাটি প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া চলছে। প্রতিবাদের বিষয়টি আমলে নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিভিন্ন সময় বলেছেন, ৫৭ ধারা বাতিল হতে পারে এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রণয়ন করা হবে। গত ০৯ জুলাই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের খসড়া বিষয়ে সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘সভায় ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ নিয়ে যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, সেখানে অনেক কিছুই এসেছে। তবে সেসব বিষয়ে এ সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনায় যেসব কথাবার্তা এসেছে, তার একটি রূপরেখা করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মধ্যে এনে আমরা আগামী আগস্ট মাসে এটির একটি ড্রাফট নিয়ে আবার মিটিংয়ে বসবো। সেই মিটিংয়ে বসে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো। সেখানে ৫৭ ধারা সম্পর্কে আমাদের সিদ্ধান্ত আপনারা পাবেন’। যদি ধারাটি বাতিল হয় তাহলে সাড়ে সাত শতাধিক মামলার কি হবে- এ প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, ধারা বাতিল হলেও মামলা চলবে। কারণ, যেদিন থেকে ধারা বাতিল হবে, সেদিন থেকে আর মামলা হবে না। কিন্তু যেগুলো হয়ে গেছে সেগুলো চলতে থাকবে। অপরাধ প্রমাণ সাপেক্ষে আদালত কাউকে সাজা দিতে পারেন আবার অব্যাহতিও দিতে পারেন। ধারা বাতিল হওয়ার আগে তো মামলা বাতিল হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শ ম রেজাউল করিম বলেন, যদি চার্জশিট হওয়ার আগে ধারাটি বাতিল হয়, তাহলে অপরাধ থাকলে আইনের অন্য ধারা সন্নিবেশিত করেও মামলার কার্যক্রম চলতে পারে। ৫৭ ধারার বৈধতা নিয়ে করা রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, মামলা বাতিলের সুযোগ নেই। যতোদিন পর্যন্ত ধারাটি থাকবে, ততোদিন পর্যন্ত মামলা হলে তা বলবৎ থাকবে। ধারা বাতিল হলে তো আর মামলা হবে না। ০৯ জুলাই আইনমন্ত্রীও বলেছিলেন, ‘৫৭ ধারা যদি আমরা বাতিলও করে দেই, তাহলে এই যে মামলা যেগুলো হয়েছে, সে ব্যাপারে কিন্তু একটি সিদ্ধান্ত যখন ওই আইন করবো, তখন নিতে হবে। ৫৭ ধারায় এখন যে মামলাগুলো হয়েছে, সেগুলো কিন্তু আদালত ও তদন্তের এখতিয়ারে রয়েছে’।